,

শায়েস্তাগঞ্জে আসে না ট্রেন, চলে না জীবন

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ‘এই বাদাম, ডিম, পেপার, লাগেনি চা কিংবা ভিক্ষুকের ভিক্ষা প্রার্থনা’- এমনটি শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিদিনকার নিয়মিত চিত্র। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত থাকে মানুষের আনাগোনা। সেই সাথে ট্রেনের ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক শব্দ। কিন্তু এখন কিছুই নেই। আছে কেবল সুনসান নীরবতা। লকডাউনে রেল বন্ধ থাকায় নীরব স্টেশনে কয়েকটি কুকুরের পায়চারী। ফেরী করে বিক্রি করা হকাররাও তেমন নেই। আছে স্টেশন প্লাটফর্মে বসা কিছু মুদি দোকান। যেসব দোকানে একসময় অগণন ক্রেতার ভিড় থাকত এখন সেখানে দিনে ৫ থেকে ১০ জন ক্রেতার আনাগোনা। তাইতো ট্রেনের সাথে যেন বন্ধ হতে চলেছে জীবনের গতিপথ। দিন শেষে খাবার যোগানোই দায়। কেবল রেলওয়ে স্টেশন নয়, দফায় দফায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও লকডাউনে শায়েস্তাগঞ্জে থমকে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা। বিপাকে পড়েছেন উপজেলার খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সাধারণ মানুষরা। যে মানুষগুলো ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত টাকা দিয়ে দিনশেষে চাল ডাল নিয়ে বাড়ি ফিরত, সে টাকা কামানোর মেশিনগুলো অকেজো হয়ে এখন ঘরবন্দি অবস্থায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রেনযাত্রী, ফেরিওয়ালা আর ভিক্ষুকের আনাগোনায় কোলাহল মুখর শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। যাত্রীবিহীন ওই স্টেশনে যাত্রীদের বসার আসনগুলো খালি পড়ে আছে। যাত্রীদের আনাগোনা না থাকায় স্টেশনের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্লাটফরমে অবস্থিত দোকানগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতার দেখা মিলেনি। প্লাটফরমে জীবিকার তাগিদে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা জানান, রেলওয়ে ষ্টেশনে জুতা সেলাই ও রং করার কাজটি মূলত রেলযাত্রীদের উপর নির্ভরশীল। কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আমরা বেকার সময় পার করছি। উপরন্তু পরিবারের লোকজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুর্ভোগে দিন কাটছে। উপজেলার দাউদ নগর বাজারের চা দোকানের সামনে পান সিগারেট বিক্রেতা মো. হেলালউদ্দিন জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হোটেল রেস্তোরাঁগুলো তেমন চলছে না। এমনিতে তিনি প্রতিদিন এখানে পান সিগারেট বিক্রি করে ২/৩ শ টাকা আয় করেন এবং এ দিয়ে তার সংসার চলে। টানা লকডাউনে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘরে বসে মূলধন ভেঙ্গে সংসার চালাতে হচ্ছে। লকডাউন উঠে গেলে কিভাবে আবার ওই দোকান চালাবেন এ নিয়ে সংশয়ে দিন কাটে তার। রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের ক্ষুদ্র দোকানী শাহ আলম বলেন, রেলগাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগার নাই। পরিবার পরিজন নিয়ে করতে হচ্ছে মানবেতর জীবন-যাপন। একদিকে বর্তমানে চলছে সিয়াম, সামনে আসছে ঈদ। রিকশা, টমটম নিয়ে বের হলেও নানারকম পুলিশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় অটোচালকদের। একরাশ ক্ষুধার যন্ত্রণা বুকে আর মাথায় স্ত্রী সন্তানদের খাদ্যের খোরাকির চিন্তা তাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। এসব নিম্ন আয়ের মানুষরা এখনো কোন সরকারি সহায়তার আওতায় আসেনি, তাই পেটের দায়ে তারা বের হন বলে জানান অধিকাংশ মানুষ। এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা আসবে। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। উপজেলায় ও পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে মানবিক সহায়তা পাবেন পৌরসভার ৫০০ জন, ও প্রতি ইউনিয়নে ৫০০ হতদরিদ্র। তারা জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে পাবেন। এছাড়াও ডিজিএফ এর আওতাধীন পৌরসভায় ৮৬২১জন ও ইউনিয়নে প্রায় ৫০০০ মানুষ ৪৫০ টাকা করে পাবেন যারা এই লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর